বড়ালের পানি দূষিত, ধ্বংসের মুখে জেলে

বড়ালের পানি দূষিত, ধ্বংসের মুখে জেলে

118247534 347561186634170 6446532600115437808 O

মো. শিমুল পারভেজ
মোবাইল-০১৩১৮৫৬৯৮৭৩

বড়াল নদী বা বড়াল আপার নদী বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী জেলা এবং নাটোর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৮৯ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬৩ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক বড়াল আপার নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৭৭।
এটি পদ্মা নদীর একটি শাখা নদী।বড়াল নদীর উৎপত্তি রাজশাহী জেলার চারঘাট থেকে পদ্মা নদীর শাখা নদী হিসেবে। রাজশাহীর চারঘাট থেকে বাঘা, নাটোরের বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে বাঘাবাড়ী হয়ে এটি হুড়া সাগরে মিশে নাকালিয়া নামক স্থানে যমুনা নদীতে পড়েছে।

এটি রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ চারটি জেলা ও আটটি উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটি পদ্মা-যমুনার সংযোগকারী নদী ছিল। এছাড়া এই নদী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলাভূমি চলনবিলের পানি প্রবাহের প্রধান সংযোগ নদী। নদীটি তুলনবামূলকভাবে ছোট হলেও এটির নাব্যতা ছিল ভালো, ছিল খরস্রোত।

১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে এর উৎপত্তিস্থলে, চারঘাটে, বন্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর ফলে বড়ালে জলপ্রবাহ কমে যেতে থাকে; নদীটির মরণ পক্রিয়া শুরু হয়। বড়ালের উৎসস্থল চারঘাটে একটি জলফটক, ৪৬ কিলোমিটার ভাটিতে আটঘড়ি নামক স্থানে আরো একটি জলফটক, বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া এলাকায় তীরদখল, ১২৫ কিলোমিটার ভাটিতে পাবনার চাটমোহর উপজেলায় ৩টি আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ এবং দহপাড়ায় আরো একটি জলফটক তৈরী করা হয়।

জলফটকগলি নষ্ট হয়ে বন্ধ হয়ে গেলে বড়ালে জলপ্রবাহ শূন্যে নেমে আসে; ধীরে ধীরে বড়াল মরে যেতে থাকে এবং এককালের প্রমত্তা বড়াল নদী ক্রমশ: জলহীন কৃশ খালে পরিণত হয়। যোগাযোগের সুবিধার কারণে বড়াল নদীর দুই পাড়ে আড়ানী বাজার, রুসত্মমপুর পশুহাট, পাঁকা বাজার, জামনগর বাজার, বাঁশবাড়িয়া বাজার, তমালতলা বাজার, বাগাতিপাড়া থানা, দয়ারামপুর সেনানিবাসসহ ইত্যাদি গড়ে উঠেছিল। এগুলোর কর্মকাণ্ডেও ভাটা পড়ে।

২০১৫ সালে চাটমোহরের জনগন “বাঁধ ভেঙ্গে ব্রিজ করো বড়াল নদী চালু করো” এই স্লোগানকে মুখ্য করে আন্দোলন করে বড়ালকে তার যৌবন ফিরিয়ে দিতে। আন্দালনের ফলশ্রুতিতে ২০১৭ সালে বাঁধ ভেঙ্গে ব্রিজ করা হয়। গত দুইবছর বন্যার পানি আসলেও বড়াল তার আগের যৌবন এখনো ফিরে পায় নাই কারন নদীর গভীরতা নেই।

“এইবছর বন্যার পানিতে প্রচুর কচুরিপানা এসেছে কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কচুরিপানা পরিস্কার করার কথা থাকলেও পরিস্কার করা হয় নাই এবং পাট জাগ দেওয়ার ফলে নদীর পানি চরমভাবে দূষিত হয়েছে ” বলে জানালেন চাটমোহরের জেলে মোহরম হোসেন।

উনিশ শতকের আগে হরেক রকমের মাছ পাওয়া যেত কিন্তু এখন মাছের দেখা পাওয়া যেন ডুমুরের ফুলে পরিণত হয়েছে, ধর্ম জাল ফেলে মাছ আহরণ পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে যদি বড়াল নদী ড্রেজিং করা না হয়।

“সাত থেকে আটবার ধর্ম জাল ফেলে ৫-৬ টি পুঁটি মাছের দেখা মেলে” বলে জানালেন মোঃ গাজী নামের এক জেলে।

চাটমোহর বসবাসকারী সকল জনসাধারণের দাবি নদীটার সুস্থ যৌবন ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন সঠিক ভূমিকা পালন করে

Please Share This Post in Your Social Media

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY Rayhan